হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণার কুফল
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহঃ
অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
চেয়ারম্যান, আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট
আল্লাহর পথে চলতে সচেষ্ট ও ধর্ম-সচেতন অনেক মানুষ অনেক সময় এসব ইবাদত বিধ্বংসী পাপের মধ্যে লিপ্ত হয়ে যান। অনেক সচেতন মুসলিম ব্যভিচার, মিথ্যা, মদপান, সালাত বা সিয়াম পরিত্যাগ ইত্যাদি পাপে কখনোই লিপ্ত হন না। কখনো এরূপ কিছু করলে সকাতরে তাওবা-ইসতিগফার করতে থাকেন। কিন্তু জেনে অথবা না জেনে তাঁরা শিরক, কুফর, বিদ‘আত, হিংসা, অহঙ্কার, লোভ, আত্মতুষ্টি, গীবত ইত্যাদি পাপের মধ্যে লিপ্ত হচ্ছেন।
এর কারণ, কোনো মানুষের ক্ষেত্রেই শয়তান কখনো নিরাশ হয় না। প্রত্যেক মানুষকেই কোনো না কোনোভাবে বিভ্রান্ত করতে সে সদা সচেষ্ট। সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য তার নিজস্ব পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী রয়েছে। সবাইকেই সে পরিপূর্ণ ধর্মহীন অবিশ্বাসী করতে চায়। যাদের ক্ষেত্রে সে তা করতে সক্ষম না হয় তাদেরকে সে ‘ধর্মের আবরণে’ পাপের মধ্যে লিপ্ত করে। অথবা বিভিন্ন প্রকার ‘অন্তরের পাপে’ লিপ্ত করে, যেগুলো নেককার মানুষের নেক-আমল নষ্ট করে দেয়, অথচ সেগুলোকে অনুধাবন করা অনেক সময় ধার্মিক মানুষের জন্যও কষ্টকর হয়ে যায়। এ জাতীয় কিছু পাপের কথা ইতিপূর্বে বিভিন্ন প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আরো কিছু আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা:
মানব হৃদয়ের অন্যতম নোংরা ও ক্ষতিকারক কর্ম বিদ্বেষ, ঘৃণা, অমঙ্গল কামনা, পারস্পারিক শত্রুতা, ইত্যাদি। হৃদয়ে এগুলোর উপস্থিতি হৃদয়কে কলুষিত করে, ভারাক্রান্ত করে, আল্লাহর যিকর থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং সর্বোপরি অন্যান্য নেক আমল নষ্ট করে দেয়। হাদীসের আলোকে মুসলমান মুসলমানে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতার দুটি ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা জানতে পারি।
প্রথমত, আল্লাহর বিশেষ ক্ষমা লাভ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
تُعْرَضُ أَعْمَالُ النَّاسِ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّتَيْنِ يَوْمَ الاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ إِلاَّ عَبْدًا بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ اتْرُكُوا أَوْ ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيئَا
“প্রতি সপ্তাহে দু’বার-সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দাদের কর্ম (আল্লাহর দরবারে) পেশ করা হয়। তখন সকল মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, শুধুমাত্র সে ব্যক্তি বাদে যার ও তার অন্য ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা (hatred) আছে। এদের বিষয়ে বলা হয় : এদের বিষয় স্থগিত রাখ, যতক্ষণ না এরা ফিরে আসে।” মুসলিম (৪৫- কিতাবুল বিরর, ১১-বাবুন্নাহয়ি আনিস শাহনা) ৪/১৯৮৮ (ভা. ২/৩১৭)।
অন্য হাদীসে মু’আয ইবনু জাবাল (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
يَطَّلِعُ اللهُ (إِلَى جَمِيْعِ خَلْقِهِ) فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلاَّ لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ (لأَخِيْهِ)
“শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রাত্রে (১৪ই শা’বানের দিবাগত রাতে) আল্লাহ তাঁর বান্দাগণের দিকে দৃষ্টিপাত করেন এবং তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, শুধুমাত্র শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি এবং যে ব্যক্তির সাথে অন্য ভাইয়ের বিদ্বেষ (hatred) রয়েছে তাদেরকে বাদে।”
হাদীসটি বিভিন্ন সনদে বিভিন্ন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি সনদ হাসান বা গ্রহণযোগ্য। সার্বিকভাবে হাদীসটি সহীহ। মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫, সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ ৩/১৩৫-১৩৯, নং ১১৪৪, সহীহুল জামিয়িস সাগীর ১/১৯৫, নং ৭৭১, ১/৩৮৫, নং ১৮৯৮, মাওয়ারিদুয যামআন ৬/২৭৮-২৮০।
দ্বিতীয়ত, সকল নেক কর্ম ও ধর্ম ধ্বংস করে দেয়। যুবাইর ইবুনল আউআম (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
دَبَّ إِلَيْكُمْ دَاءُ الأُمَمِ قَبْلَكُمْ الْحَسَدُ وَالْبَغْضَاءُ هِيَ الْحَالِقَةُ لاَ أَقُولُ تَحْلِقُ الشَّعَرَ وَلَكِنْ تَحْلِقُ الدِّينَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَفَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِمَا يُثَبِّتُ ذَاكُمْ لَكُمْ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ
“পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ব্যাধি তোমাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে: হিংসা ও বিদ্বেষ। এ বিদ্বেষ মুণ্ডনকারী। আমি বলি না যে তা চুল মুণ্ডন করে, বরং তা দ্বীন বা ধর্মকে মুণ্ডন ও ধ্বংস করে দেয়। আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর শপথ করে বলছি, ঈমানদার না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পরস্পরে একে অপরকে ভাল না বাসলে তোমরা বিশ্বাসী বা মুমিন হতে পারবে না। এ ভালবাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, সর্বত্র ও সবর্দা পরস্পরে সালাম প্রদানের রেওয়াজ প্রচলিত রাখবে।” হাদীসটি গ্রহণযোগ্য। তিরমিযী (৩৮-কিতাব সিফাতিল কিয়ামা, ৫৬-বাব) ৪/৫৭৩, নং ২৫১০ (ভারতীয় ২/৭৭); হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৩০; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ৩/২৩৭-২৪২, নং ৭৭৭।
আবু হুরাইরা (রা) থেকে যয়ীফ সনদে বর্ণিত অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ أَوْ قَالَ الْعُشْبَ
“খবরদার! হিংসা থেকে আত্মরক্ষা করবে; কারণ হিংসা এমনভাবে নেককর্ম ধ্বংস করে, যেমনভাবে আগুন খড়ি বা খড়কুটো পুড়িয়ে ফেলে।” হাদীসটির সনদ দুর্বল, তবে উপরের হাদীসের অর্থ তা সমর্থন করে। আবূ দাউদ (৪২-কিতাব আদাব, ৫২-বাবুন ফীল হাসাদ) ৪/২৭৮, নং ৪৯০৩ (ভারতীয় ২/৬৭২), যায়ীফুল জামিয়িস সাগীর, পৃ. ৩২৩, নং ২১৯৭।
মানব হৃদয়ের অন্যতম নোংরা ও ক্ষতিকারক কর্ম বিদ্বেষ, ঘৃণা, অমঙ্গল কামনা, পারস্পারিক শত্রুতা, ইত্যাদি। হৃদয়ে এগুলোর উপস্থিতি হৃদয়কে কলুষিত করে, ভারাক্রান্ত করে, আল্লাহর যিকর থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং সর্বোপরি অন্যান্য নেক আমল নষ্ট করে দেয়। হাদীসের আলোকে মুসলমান মুসলমানে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতার দুটি ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা জানতে পারি।
প্রথমত, আল্লাহর বিশেষ ক্ষমা লাভ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
تُعْرَضُ أَعْمَالُ النَّاسِ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّتَيْنِ يَوْمَ الاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ إِلاَّ عَبْدًا بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ اتْرُكُوا أَوْ ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيئَا
“প্রতি সপ্তাহে দু’বার-সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দাদের কর্ম (আল্লাহর দরবারে) পেশ করা হয়। তখন সকল মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, শুধুমাত্র সে ব্যক্তি বাদে যার ও তার অন্য ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা (hatred) আছে। এদের বিষয়ে বলা হয় : এদের বিষয় স্থগিত রাখ, যতক্ষণ না এরা ফিরে আসে।” মুসলিম (৪৫- কিতাবুল বিরর, ১১-বাবুন্নাহয়ি আনিস শাহনা) ৪/১৯৮৮ (ভা. ২/৩১৭)।
অন্য হাদীসে মু’আয ইবনু জাবাল (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
يَطَّلِعُ اللهُ (إِلَى جَمِيْعِ خَلْقِهِ) فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلاَّ لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ (لأَخِيْهِ)
“শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রাত্রে (১৪ই শা’বানের দিবাগত রাতে) আল্লাহ তাঁর বান্দাগণের দিকে দৃষ্টিপাত করেন এবং তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, শুধুমাত্র শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি এবং যে ব্যক্তির সাথে অন্য ভাইয়ের বিদ্বেষ (hatred) রয়েছে তাদেরকে বাদে।”
হাদীসটি বিভিন্ন সনদে বিভিন্ন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি সনদ হাসান বা গ্রহণযোগ্য। সার্বিকভাবে হাদীসটি সহীহ। মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫, সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ ৩/১৩৫-১৩৯, নং ১১৪৪, সহীহুল জামিয়িস সাগীর ১/১৯৫, নং ৭৭১, ১/৩৮৫, নং ১৮৯৮, মাওয়ারিদুয যামআন ৬/২৭৮-২৮০।
দ্বিতীয়ত, সকল নেক কর্ম ও ধর্ম ধ্বংস করে দেয়। যুবাইর ইবুনল আউআম (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
دَبَّ إِلَيْكُمْ دَاءُ الأُمَمِ قَبْلَكُمْ الْحَسَدُ وَالْبَغْضَاءُ هِيَ الْحَالِقَةُ لاَ أَقُولُ تَحْلِقُ الشَّعَرَ وَلَكِنْ تَحْلِقُ الدِّينَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَفَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِمَا يُثَبِّتُ ذَاكُمْ لَكُمْ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ
“পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ব্যাধি তোমাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে: হিংসা ও বিদ্বেষ। এ বিদ্বেষ মুণ্ডনকারী। আমি বলি না যে তা চুল মুণ্ডন করে, বরং তা দ্বীন বা ধর্মকে মুণ্ডন ও ধ্বংস করে দেয়। আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর শপথ করে বলছি, ঈমানদার না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পরস্পরে একে অপরকে ভাল না বাসলে তোমরা বিশ্বাসী বা মুমিন হতে পারবে না। এ ভালবাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, সর্বত্র ও সবর্দা পরস্পরে সালাম প্রদানের রেওয়াজ প্রচলিত রাখবে।” হাদীসটি গ্রহণযোগ্য। তিরমিযী (৩৮-কিতাব সিফাতিল কিয়ামা, ৫৬-বাব) ৪/৫৭৩, নং ২৫১০ (ভারতীয় ২/৭৭); হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৩০; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ৩/২৩৭-২৪২, নং ৭৭৭।
আবু হুরাইরা (রা) থেকে যয়ীফ সনদে বর্ণিত অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ أَوْ قَالَ الْعُشْبَ
“খবরদার! হিংসা থেকে আত্মরক্ষা করবে; কারণ হিংসা এমনভাবে নেককর্ম ধ্বংস করে, যেমনভাবে আগুন খড়ি বা খড়কুটো পুড়িয়ে ফেলে।” হাদীসটির সনদ দুর্বল, তবে উপরের হাদীসের অর্থ তা সমর্থন করে। আবূ দাউদ (৪২-কিতাব আদাব, ৫২-বাবুন ফীল হাসাদ) ৪/২৭৮, নং ৪৯০৩ (ভারতীয় ২/৬৭২), যায়ীফুল জামিয়িস সাগীর, পৃ. ৩২৩, নং ২১৯৭।
অ্যায়ের ঘৃণা বনাম হিংসা ও অহংকার:
আরেকটি বিষয় আমাদেরকে সমস্যায় ফেলে দেয়। আমরা জানি যে, শিরক, কুফর, বিদ‘আত, হারাম, পাপ ইত্যাদিকে ঘৃণা করা ও যারা এগুলোতে লিপ্ত বা এগুলোর প্রচার প্রসারে লিপ্ত তাদেরকে ঘৃণা করা আমাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ঈমানী দায়িত্ব। আমরা এ দায়িত্ব ও হৃদয়কে মুক্ত রাখার মধ্যে কিভাবে সমন্বয় সাধন করব?
এ বিষয়টিকে শয়তান অন্যতম ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে, যা দিয়ে সে অগণিত ধার্মিক মুসলিমকে হিংসা, হানাহানি, আত্মতৃপ্তি ও অহংকারের মত জঘন্যতম কবীরা গোনাহের মধ্যে নিপতিত করছে। এ ফাঁদ থেকে আত্মরক্ষার জন্য সংক্ষেপে নিচের বিষয়গুলো স্মরণ রাখতে হবে।
প্রথম বিষয়: পাপ অন্যায়, জুলুম অত্যাচার, শিরক, কুফর, বিদ‘আত বা নিফাককে অপছন্দ বা ঘৃণা করতে হবে রাসূলুল্লাহ সা.-এর অনুসরণে ও তাঁর প্রদত্ত গুরুত্ব অনুসারে। তিনি যে পাপকে যতটুকু ঘৃণা করেছেন, নিন্দা করেছেন বা যতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন ততটুকু গুরুত্ব দিতে হবে। তাঁর পদ্ধতি বা সুন্নাতের বাইরে মনগড়াভাবে ঘৃণা করলে তা হবে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ইসলামের নামে নিজের ব্যক্তি আক্রোশ বা অহংকারকে প্রতিষ্ঠা করা ও শয়তানের আনুগত্য করা।
এক্ষেত্রে অধিকাংশ ধার্মিক মানুষ কঠিন ভুলে নিপতিত হন। কুরআন ও সুন্নাহে বর্ণিত কঠিন পাপগুলোকে আমরা ঘৃণা করি না বা বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করি না, কিন্তু যেগুলো কোনো পাপ নয়, কম ভয়ঙ্কর পাপ বা যেগুলোর বিষয়ে কুরআন-হাদীসে সুস্পষ্ট নির্দেশ না থাকায় আলিমগণ মতভেদ করেছেন সেগুলো নিয়ে হিংসা-বিদ্বেষে নিপতিত হই। ইতোপূর্বে আমি ইসলামের কর্মগুলোর পর্যায় আলোচনা করেছি। আমাদের সমাজের ধার্মিক মুসলিমদের দলাদলি, গীবতনিন্দা ও অহঙ্কারের ভিত্তি শেষ দুই-তিন পর্যায়ের সুন্নাত-নফল ইবাদত। আমরা কুফর, শিরক, হারাম উপার্জন, মানুষের ক্ষতি, সৃষ্টির অধিকার নষ্ট, ফরয ইবাদত ত্যাগ ইত্যাদি বিষয়ে তেমন কোনো আপত্তি, বিরোধিতা বা ঘৃণা করি না। অথচ নফল নিয়ে কি ভয়ঙ্কর হিংসা ঘৃণার সয়লাব। অনেক সময় এসকল নফল, ইখতিলাফী বিষয়, অথবা মনগড়া কিছু ‘আকীদা’কে ঈমানের মানদণ্ড বানিয়ে ফেলি।
যে ব্যক্তি ফরয সালাত মোটেই পড়ে না, তার বিষয়ে আমরা বেশি চিন্তা করি না, কিন্তু যে সুন্নাত সালাত আদায় করল না, বা সালাতের মধ্যে টুপি বা পাগড়ী পরল না, অথবা সালাতের শেষে মুনাজাত করল বা করল না, অথবা সালাতের মধ্যে হাত উঠালো বা উঠালো না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমরা হানাহানি ও অহঙ্কারে লিপ্ত রয়েছি।
দ্বিতীয় বিষয়: এ ঘৃণা একান্তই আদর্শিক ও ঈমানী। ব্যক্তিগত জেদাজেদি, আক্রোশ বা শত্র“তার পর্যায়ে যাবে না। আমি পাপটিকে ঘৃণা করি। পাপে লিপ্ত মানুষটিকে আমি খারাপে লিপ্ত বলে জানি। আমি তার জন্য দু‘আ করি যে, আল্লাহ তাকে পাপ পরিত্যাগের তাওফীক দিন।
তৃতীয় বিষয়: ঘৃণা অর্থ হিংসা নয়। ভালবাসার সাথে এ ঘৃণা একত্রিত থাকে। মা তার মলমূত্র জড়ানো শিশুকে দেখে নাক সিটকায় ও তাকে ঘৃণা করে। আপন ভাই তার অপরাধে লিপ্ত ভাইকে ঘৃণা করে। কিন্তু এ ঘৃণার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে থাকে ভালবাসা। মূলত ব্যক্তি শিশু বা ব্যক্তি ভাইকে ঘিরে থাকে তার সীমাহীন ভালবাসা, আর তার গায়ে জড়ানো ময়লা বা অপরাধকে ঘিরে থাকে ঘৃণা। সাথে থাকে তাকে ঘৃণিত বিষয় থেকে মুক্ত করার আকুতি। মুমিনের পাপের প্রতি ঘৃণাও অনুরূপ। পাপের প্রতি ঘৃণা যেমন দায়িত্ব, ঈমানের প্রতি ভালবাসাও অনুরূপ দায়িত্ব। মুমিনের পাপের দিকে নয়, বরং তার ঈমানের দিকে আগে দৃষ্টি দিতে হবে। ঈমান ও অন্যান্য নেক আমলের জন্য মুমিনকে ভালবাসা ফরয। পাশাপাশি পাপের প্রতি আমাদের ঘৃণা থাকবে, এই ঘৃণা কখনোই মুমিনকে হিংসা করতে শেখায় না, বরং মুমিন ভাইয়ের জন্য দরদভরা দু‘আ করতে প্রেরণা দেয়, যেন তিনি পাপ থেকে মুক্ত হতে পারেন।
চতুর্থ বিষয়: ঘৃণা ও অহংকার এক নয়। আমি পাপকে ঘৃণা করি। পাপীকে অন্যায়কারী মনে করি। পাপের প্রসারে লিপ্ত ব্যক্তিকে ঘৃণা করি। কিন্তু এগুলোর অর্থ এটাই নয় যে, আমি আমার নিজেকে ব্যক্তিগতভাবে অমুক পাপীর চেয়ে উন্নত, মুত্তাকী বা ভাল মনে করি। নিজেকে কারো চেয়ে ভাল মনে করা তো দূরের কথা নিজের কাজে তৃপ্ত হওয়াও কঠিন কবীরা গোনাহ ও ধ্বংসের কারণ। আমি জানি না, আমার ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে কিনা, আমি জানি না আমার পরিণতি কী আর উক্ত পাপীর পরিণতি কী, কিভাবে আমি নিজেকে অন্যের চেয়ে ভাল মনে করব?
পঞ্চম বিষয়: সবচেয়ে বড় কথা, মুমিনকে নিজের গোনাহের চিন্তায় ও আল্লাহর যিক্রে ব্যস্ত থাকতে হবে। অন্যের কথা চিন্তা করা থেকে যথা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। আমরা অধিকাংশ সময় অন্যের শিরক, কুফর, বিদ‘আত, পাপ, অন্যায় ইত্যাদির চিন্তায় ব্যস্ত থাকি। মনে হয় আমাদের বেলায়াত, কামালাত, জান্নাত, নাজাত সবকিছু নিশ্চিত। এখন শুধু দুনিয়ার মানুষের সমালোচনা করাই আমার একমাত্র কাজ।
এ থেকে বাঁচতে হলে এগুলো পরিহার করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া পাপ বা পাপীর চিন্তায় নিজের হৃদয়কে ব্যস্ত রাখা খুবই অন্যায়। এসব চিন্তা আমাদের কঠিন ও আখেরাত বিধ্বংসী পাপের মধ্যে ফেলে দেয়। এ আত্মতৃপ্তি ও অহঙ্কার। যখনই আমি পাপীর চিন্তা করি তখনই আমার মনে তৃপ্তি চলে আসে, আমি তো তার চেয়ে ভাল আছি। তখন নিজের পাপ ছোট মনে হয় ও নিজের কর্মে তৃপ্তি লাগে। আর এ ধ্বংসের অন্যতম পথ।
এজন্য সাধ্যমত সর্বদা নিজের দ্বীনী বা দুনিয়াবী প্রয়োজন বা আল্লাহর যিক্র ও নিজের পাপের চিন্তায় নিজেকে রত রাখুন। হৃদয় পবিত্র থাকবে এবং আপনি লাভবান হবেন। আল্লাহ আমাদের তাওফীক প্রদান করুন।
আরেকটি বিষয় আমাদেরকে সমস্যায় ফেলে দেয়। আমরা জানি যে, শিরক, কুফর, বিদ‘আত, হারাম, পাপ ইত্যাদিকে ঘৃণা করা ও যারা এগুলোতে লিপ্ত বা এগুলোর প্রচার প্রসারে লিপ্ত তাদেরকে ঘৃণা করা আমাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ঈমানী দায়িত্ব। আমরা এ দায়িত্ব ও হৃদয়কে মুক্ত রাখার মধ্যে কিভাবে সমন্বয় সাধন করব?
এ বিষয়টিকে শয়তান অন্যতম ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে, যা দিয়ে সে অগণিত ধার্মিক মুসলিমকে হিংসা, হানাহানি, আত্মতৃপ্তি ও অহংকারের মত জঘন্যতম কবীরা গোনাহের মধ্যে নিপতিত করছে। এ ফাঁদ থেকে আত্মরক্ষার জন্য সংক্ষেপে নিচের বিষয়গুলো স্মরণ রাখতে হবে।
প্রথম বিষয়: পাপ অন্যায়, জুলুম অত্যাচার, শিরক, কুফর, বিদ‘আত বা নিফাককে অপছন্দ বা ঘৃণা করতে হবে রাসূলুল্লাহ সা.-এর অনুসরণে ও তাঁর প্রদত্ত গুরুত্ব অনুসারে। তিনি যে পাপকে যতটুকু ঘৃণা করেছেন, নিন্দা করেছেন বা যতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন ততটুকু গুরুত্ব দিতে হবে। তাঁর পদ্ধতি বা সুন্নাতের বাইরে মনগড়াভাবে ঘৃণা করলে তা হবে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ইসলামের নামে নিজের ব্যক্তি আক্রোশ বা অহংকারকে প্রতিষ্ঠা করা ও শয়তানের আনুগত্য করা।
এক্ষেত্রে অধিকাংশ ধার্মিক মানুষ কঠিন ভুলে নিপতিত হন। কুরআন ও সুন্নাহে বর্ণিত কঠিন পাপগুলোকে আমরা ঘৃণা করি না বা বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করি না, কিন্তু যেগুলো কোনো পাপ নয়, কম ভয়ঙ্কর পাপ বা যেগুলোর বিষয়ে কুরআন-হাদীসে সুস্পষ্ট নির্দেশ না থাকায় আলিমগণ মতভেদ করেছেন সেগুলো নিয়ে হিংসা-বিদ্বেষে নিপতিত হই। ইতোপূর্বে আমি ইসলামের কর্মগুলোর পর্যায় আলোচনা করেছি। আমাদের সমাজের ধার্মিক মুসলিমদের দলাদলি, গীবতনিন্দা ও অহঙ্কারের ভিত্তি শেষ দুই-তিন পর্যায়ের সুন্নাত-নফল ইবাদত। আমরা কুফর, শিরক, হারাম উপার্জন, মানুষের ক্ষতি, সৃষ্টির অধিকার নষ্ট, ফরয ইবাদত ত্যাগ ইত্যাদি বিষয়ে তেমন কোনো আপত্তি, বিরোধিতা বা ঘৃণা করি না। অথচ নফল নিয়ে কি ভয়ঙ্কর হিংসা ঘৃণার সয়লাব। অনেক সময় এসকল নফল, ইখতিলাফী বিষয়, অথবা মনগড়া কিছু ‘আকীদা’কে ঈমানের মানদণ্ড বানিয়ে ফেলি।
যে ব্যক্তি ফরয সালাত মোটেই পড়ে না, তার বিষয়ে আমরা বেশি চিন্তা করি না, কিন্তু যে সুন্নাত সালাত আদায় করল না, বা সালাতের মধ্যে টুপি বা পাগড়ী পরল না, অথবা সালাতের শেষে মুনাজাত করল বা করল না, অথবা সালাতের মধ্যে হাত উঠালো বা উঠালো না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমরা হানাহানি ও অহঙ্কারে লিপ্ত রয়েছি।
দ্বিতীয় বিষয়: এ ঘৃণা একান্তই আদর্শিক ও ঈমানী। ব্যক্তিগত জেদাজেদি, আক্রোশ বা শত্র“তার পর্যায়ে যাবে না। আমি পাপটিকে ঘৃণা করি। পাপে লিপ্ত মানুষটিকে আমি খারাপে লিপ্ত বলে জানি। আমি তার জন্য দু‘আ করি যে, আল্লাহ তাকে পাপ পরিত্যাগের তাওফীক দিন।
তৃতীয় বিষয়: ঘৃণা অর্থ হিংসা নয়। ভালবাসার সাথে এ ঘৃণা একত্রিত থাকে। মা তার মলমূত্র জড়ানো শিশুকে দেখে নাক সিটকায় ও তাকে ঘৃণা করে। আপন ভাই তার অপরাধে লিপ্ত ভাইকে ঘৃণা করে। কিন্তু এ ঘৃণার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে থাকে ভালবাসা। মূলত ব্যক্তি শিশু বা ব্যক্তি ভাইকে ঘিরে থাকে তার সীমাহীন ভালবাসা, আর তার গায়ে জড়ানো ময়লা বা অপরাধকে ঘিরে থাকে ঘৃণা। সাথে থাকে তাকে ঘৃণিত বিষয় থেকে মুক্ত করার আকুতি। মুমিনের পাপের প্রতি ঘৃণাও অনুরূপ। পাপের প্রতি ঘৃণা যেমন দায়িত্ব, ঈমানের প্রতি ভালবাসাও অনুরূপ দায়িত্ব। মুমিনের পাপের দিকে নয়, বরং তার ঈমানের দিকে আগে দৃষ্টি দিতে হবে। ঈমান ও অন্যান্য নেক আমলের জন্য মুমিনকে ভালবাসা ফরয। পাশাপাশি পাপের প্রতি আমাদের ঘৃণা থাকবে, এই ঘৃণা কখনোই মুমিনকে হিংসা করতে শেখায় না, বরং মুমিন ভাইয়ের জন্য দরদভরা দু‘আ করতে প্রেরণা দেয়, যেন তিনি পাপ থেকে মুক্ত হতে পারেন।
চতুর্থ বিষয়: ঘৃণা ও অহংকার এক নয়। আমি পাপকে ঘৃণা করি। পাপীকে অন্যায়কারী মনে করি। পাপের প্রসারে লিপ্ত ব্যক্তিকে ঘৃণা করি। কিন্তু এগুলোর অর্থ এটাই নয় যে, আমি আমার নিজেকে ব্যক্তিগতভাবে অমুক পাপীর চেয়ে উন্নত, মুত্তাকী বা ভাল মনে করি। নিজেকে কারো চেয়ে ভাল মনে করা তো দূরের কথা নিজের কাজে তৃপ্ত হওয়াও কঠিন কবীরা গোনাহ ও ধ্বংসের কারণ। আমি জানি না, আমার ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে কিনা, আমি জানি না আমার পরিণতি কী আর উক্ত পাপীর পরিণতি কী, কিভাবে আমি নিজেকে অন্যের চেয়ে ভাল মনে করব?
পঞ্চম বিষয়: সবচেয়ে বড় কথা, মুমিনকে নিজের গোনাহের চিন্তায় ও আল্লাহর যিক্রে ব্যস্ত থাকতে হবে। অন্যের কথা চিন্তা করা থেকে যথা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। আমরা অধিকাংশ সময় অন্যের শিরক, কুফর, বিদ‘আত, পাপ, অন্যায় ইত্যাদির চিন্তায় ব্যস্ত থাকি। মনে হয় আমাদের বেলায়াত, কামালাত, জান্নাত, নাজাত সবকিছু নিশ্চিত। এখন শুধু দুনিয়ার মানুষের সমালোচনা করাই আমার একমাত্র কাজ।
এ থেকে বাঁচতে হলে এগুলো পরিহার করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া পাপ বা পাপীর চিন্তায় নিজের হৃদয়কে ব্যস্ত রাখা খুবই অন্যায়। এসব চিন্তা আমাদের কঠিন ও আখেরাত বিধ্বংসী পাপের মধ্যে ফেলে দেয়। এ আত্মতৃপ্তি ও অহঙ্কার। যখনই আমি পাপীর চিন্তা করি তখনই আমার মনে তৃপ্তি চলে আসে, আমি তো তার চেয়ে ভাল আছি। তখন নিজের পাপ ছোট মনে হয় ও নিজের কর্মে তৃপ্তি লাগে। আর এ ধ্বংসের অন্যতম পথ।
এজন্য সাধ্যমত সর্বদা নিজের দ্বীনী বা দুনিয়াবী প্রয়োজন বা আল্লাহর যিক্র ও নিজের পাপের চিন্তায় নিজেকে রত রাখুন। হৃদয় পবিত্র থাকবে এবং আপনি লাভবান হবেন। আল্লাহ আমাদের তাওফীক প্রদান করুন।
No comments:
Post a Comment