(১৬) প্রশ্ন: দেহের কোন স্থান থেকে রক্তপ্রবাহিত হওয়ার করণে ওযু ভঙ্গ হয় কি ?
(১৬) উত্তর: অস্বাভাবিক রক্তপ্রবাহিত হওয়া, চাই তা যখমের কারণে হোক বা সিঙ্গা লাগানোর জন্যই হোক, কম হোক বা বেশি হোক: বিদ্বানগণের বিশুদ্ধ মতে, এ কারণে ওযু নষ্ট হবে না।
এটা ইমাম শাফেঈ, মালিক ও আবূ হানীফা (রাহি.) এর অভিমত। আর হাম্বলী মাযহাবের মতে, রক্ত যখন বেশি প্রবাহিত হবে তখন ওযু নষ্ট হবে।১ তবে প্রথম মতটি কয়েকটি কারণে বিশুদ্ধ:
(১) যে হাদীস গুলোতে এর কারণে ওযু করাকে ওয়াজিব বলা হয়েছে , তার কোনটিও সহীহ নয়।
(২) মূলতঃ ওযুকারীর ওযু ঠিক থাকবে। শরীয়াতের দলীল অথবা ইজমা ছাড়া ওযু ভঙ্গ হবে বলে দাবী করা ঠিক হবে না।
(৩) যাতুর রিকা যুদ্ধের ঘটনায় বর্ণিত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) এর হাদীসে বলা হয়েছে,
اضْطَجَعَ الْمُهَاجِرِيُّ، وَقَامَ الْأَنْصَارِيُّ يُصَلِّ، وَأَتَى الرَّجُلُ فَلَمَّا رَأَى شَخْصَهُ عَرَفَ أَنَّهُ رَبِيئَةٌ لِلْقَوْمِ، فَرَمَاهُ بِسَهْمٍ فَوَضَعَهُ فِيهِ فَنَزَعَهُ، حَتَّى رَمَاهُ بِثَلَاثَةِ أَسْهُمٍ، ثُمَّ رَكَعَ وَسَجَدَ، ثُمَّ انْتَبَهَ صَاحِبُهُ، فَلَمَّا عَرَفَ أَنَّهُمْ قَدْ نَذِرُوا بِهِ هَرَبَ، وَلَمَّا رَأَى الْمُهَاجِرِيُّ مَا بِالْأَنْصَارِيِّ مِنَ الدَّمِ، قَالَ: سُبْحَانَ اللَّهِ أَلَا أَنْبَهْتَنِي أَوَّلَ مَا رَمَى، قَالَ: كُنْتَ فِي سُورَةٍ أَقْرَؤُهَا فَلَمْ أُحِبَّ أَنْ أَقْطَعَهَا
অর্থাৎ, মুহাজির সাহাবী বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়েন এবং আনসার সাহাবী সালাত রত হন। তখন শত্রম্ন পক্ষের ব্যক্তি সেখানে আগমন করে এবং মুসলিম বাহিনীর একজন গোয়েন্দা মনে করে তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করে এবং তা আনসার সাহাবীর শরীরে বিদ্ধ হয়। তিনি তা দেহ থেকে বের করে ফেলেন। মুশরিক ব্যক্তি এভাবে পরপর তিনটি তীর নিক্ষেপ করে। অতঃপর তিনি রুকু সাজদা করে (সালাত শেষ করার পর) তাঁর সাথীকে জাগ্রত করেন। অতঃপর সে ব্যক্তি সেখানে অনেক লোক আছে এবং তারা সতর্ক হয়ে গেছে মনে করে পালিয়ে যায়। পরে মুহাজির সাহাবী আনসার সাহাবীর রক্তাক্ত অবস্থা দেখে আশ্চর্যন্বিত হয়ে বলেন, সুবহানালস্নাহ! শত্রম্ন পক্ষের প্রথম তীর নিক্ষপের সময় কেন আপনি আমাকে সতর্ক করেননি? জবাবে তিনি বলেন, আমি সালাতের মধ্যে (তন্ময়তার সাথে) এমন একটি সূরা পাঠ করছিলাম যা শেষ না করে পরিত্যাগ করা পছন্দ করিনি।২
অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, মহানাবী (সাঃ) এ ব্যাপারে জানার পর এতো রক্ত প্রবাহিত হওয়ার পরও সালাতে অবিচল থাকতে নিষেধ করেন নি। যদি রক্ত ওযূ ভঙ্গেঁর কারণ হ’ত তাহলে মহানাবী (সাঃ) সে ব্যক্তিকে বা সে যুদ্ধে যারা ছিল তাদের কাছে এ বিষয়টি বর্ণনা করতেন। আর প্রয়োজনীয় সময় ছাড়া পরে বর্ণনা করা বৈধ নয়।৩
৪) সহীহ সূত্রে বর্ণিত যে,
- صَلَّى وَجُرْحُهُ يَثْعَبُ دَمًا أن عُمَرَ بن الخطاب لما طعن
অর্থাৎ, উমার ইবনুল খাত্তাব রাঃ যখন যখম প্রাপ্ত তখন তিনি সালাত আদায় করলেন অথচ তাঁর জখম হতে তখন রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।
৫) মুতওয়াতির পর্যায়ের অনেক হাদীস রয়েছে যে, আল্লাহ্র রাস্থায় জিহাদ কারী মোজাহিদ গণ তাদের যখমের কারণে প্রবাহিত রক্ত বন্ধ করতে সক্ষম হতনা। এর ফলে তাদের কাপড় নোংরা হয়ে যেত। অথচ তারা এমতাবস্থায় সালাত আদায় করতেন। রাসুল সাঃ এর পক্ষ থেকে কেউ এ কথা বর্ণনা করেন নি যে, এমতাবস্থায় মহানাবী সাঃ তাদের সালাত বাতিল করতে বলেছেন বা তাদেরকে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। এ জন্য হাসান বসরী (রাহি.) বলেন:
مَا زَالَ المُسْلِمُونَ يُصَلُّونَ فِي جِرَاحَاتِهِمْ
অর্থাৎ,‘‘মুসলমানেরা সবদায় তাদের শরীর ক্ষত-বিক্ষত বা জখম থাকা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন’’।৪
ইসলামী ফিকাহ গ্রন্থে রক্ত বের হলে তার বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে,
মানুষের শরীর থেকে যে রক্ত বের হয় তা দুই প্রকার:
১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দ্বারা নির্গত রক্ত। ইহা ওযু ভঙ্গকারী রক্ত।
২. শরীরের বাকি অন্য কোন স্থান দ্বারা নির্গত যেমন: নাক, দাঁত, খতস্থান ইত্যাদি হতে নির্গত রক্ত ওযু নষ্ট করবে না। রক্ত চাই কম হোক বা বেশী হোক। কিন্তু পরিস্কার-পরিচ্ছনার জন্য ধুয়ে নেওয়া উত্তম।৫
উৎসঃ
১. আল-উম্ম (১/১৮০), আল-মাজমু’ (২/৫৫), আল-ইসিত্মযকরে (২/২৬৯) আল-মাসবূত্ব (১/৭৪), আল-মুগনী (১/১৮৪)।
২. এর সনদ দুর্বল; ইমাম বুখারী (১/২৮০) মুয়ালস্নাক সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবূ দাউদ (১৯৫) আহমাদ (৩/৩৪৩), ইবনে হিববান (১০৯৬), হাকিম (১/১৫৬) দারাকুতনী (১/২২৩) এর সনদে আক্বিল বিন যাবের আসার কারণে যঈফ। আলবানী তার সহীহ আবূ দাউদ (১৯৩) গ্রন্থে সহীহ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
৩. আস-সায়লুল জারার (১/৯৯)।
৪. সহীহ বুখারী (১/২৮০) মুয়ালস্নাক সূত্রে। ইবনু আবী শায়বাহ এ হাদীসটি সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন। যেমনটি এসেছে-ফাতহুলবারী (১/২৮১)। (সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ওযূ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম)।
৫. ইসলামী ফিকাহ পৃ: ৮৭০।
এটা ইমাম শাফেঈ, মালিক ও আবূ হানীফা (রাহি.) এর অভিমত। আর হাম্বলী মাযহাবের মতে, রক্ত যখন বেশি প্রবাহিত হবে তখন ওযু নষ্ট হবে।১ তবে প্রথম মতটি কয়েকটি কারণে বিশুদ্ধ:
(১) যে হাদীস গুলোতে এর কারণে ওযু করাকে ওয়াজিব বলা হয়েছে , তার কোনটিও সহীহ নয়।
(২) মূলতঃ ওযুকারীর ওযু ঠিক থাকবে। শরীয়াতের দলীল অথবা ইজমা ছাড়া ওযু ভঙ্গ হবে বলে দাবী করা ঠিক হবে না।
(৩) যাতুর রিকা যুদ্ধের ঘটনায় বর্ণিত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) এর হাদীসে বলা হয়েছে,
اضْطَجَعَ الْمُهَاجِرِيُّ، وَقَامَ الْأَنْصَارِيُّ يُصَلِّ، وَأَتَى الرَّجُلُ فَلَمَّا رَأَى شَخْصَهُ عَرَفَ أَنَّهُ رَبِيئَةٌ لِلْقَوْمِ، فَرَمَاهُ بِسَهْمٍ فَوَضَعَهُ فِيهِ فَنَزَعَهُ، حَتَّى رَمَاهُ بِثَلَاثَةِ أَسْهُمٍ، ثُمَّ رَكَعَ وَسَجَدَ، ثُمَّ انْتَبَهَ صَاحِبُهُ، فَلَمَّا عَرَفَ أَنَّهُمْ قَدْ نَذِرُوا بِهِ هَرَبَ، وَلَمَّا رَأَى الْمُهَاجِرِيُّ مَا بِالْأَنْصَارِيِّ مِنَ الدَّمِ، قَالَ: سُبْحَانَ اللَّهِ أَلَا أَنْبَهْتَنِي أَوَّلَ مَا رَمَى، قَالَ: كُنْتَ فِي سُورَةٍ أَقْرَؤُهَا فَلَمْ أُحِبَّ أَنْ أَقْطَعَهَا
অর্থাৎ, মুহাজির সাহাবী বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়েন এবং আনসার সাহাবী সালাত রত হন। তখন শত্রম্ন পক্ষের ব্যক্তি সেখানে আগমন করে এবং মুসলিম বাহিনীর একজন গোয়েন্দা মনে করে তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করে এবং তা আনসার সাহাবীর শরীরে বিদ্ধ হয়। তিনি তা দেহ থেকে বের করে ফেলেন। মুশরিক ব্যক্তি এভাবে পরপর তিনটি তীর নিক্ষেপ করে। অতঃপর তিনি রুকু সাজদা করে (সালাত শেষ করার পর) তাঁর সাথীকে জাগ্রত করেন। অতঃপর সে ব্যক্তি সেখানে অনেক লোক আছে এবং তারা সতর্ক হয়ে গেছে মনে করে পালিয়ে যায়। পরে মুহাজির সাহাবী আনসার সাহাবীর রক্তাক্ত অবস্থা দেখে আশ্চর্যন্বিত হয়ে বলেন, সুবহানালস্নাহ! শত্রম্ন পক্ষের প্রথম তীর নিক্ষপের সময় কেন আপনি আমাকে সতর্ক করেননি? জবাবে তিনি বলেন, আমি সালাতের মধ্যে (তন্ময়তার সাথে) এমন একটি সূরা পাঠ করছিলাম যা শেষ না করে পরিত্যাগ করা পছন্দ করিনি।২
অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, মহানাবী (সাঃ) এ ব্যাপারে জানার পর এতো রক্ত প্রবাহিত হওয়ার পরও সালাতে অবিচল থাকতে নিষেধ করেন নি। যদি রক্ত ওযূ ভঙ্গেঁর কারণ হ’ত তাহলে মহানাবী (সাঃ) সে ব্যক্তিকে বা সে যুদ্ধে যারা ছিল তাদের কাছে এ বিষয়টি বর্ণনা করতেন। আর প্রয়োজনীয় সময় ছাড়া পরে বর্ণনা করা বৈধ নয়।৩
৪) সহীহ সূত্রে বর্ণিত যে,
- صَلَّى وَجُرْحُهُ يَثْعَبُ دَمًا أن عُمَرَ بن الخطاب لما طعن
অর্থাৎ, উমার ইবনুল খাত্তাব রাঃ যখন যখম প্রাপ্ত তখন তিনি সালাত আদায় করলেন অথচ তাঁর জখম হতে তখন রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল।
৫) মুতওয়াতির পর্যায়ের অনেক হাদীস রয়েছে যে, আল্লাহ্র রাস্থায় জিহাদ কারী মোজাহিদ গণ তাদের যখমের কারণে প্রবাহিত রক্ত বন্ধ করতে সক্ষম হতনা। এর ফলে তাদের কাপড় নোংরা হয়ে যেত। অথচ তারা এমতাবস্থায় সালাত আদায় করতেন। রাসুল সাঃ এর পক্ষ থেকে কেউ এ কথা বর্ণনা করেন নি যে, এমতাবস্থায় মহানাবী সাঃ তাদের সালাত বাতিল করতে বলেছেন বা তাদেরকে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। এ জন্য হাসান বসরী (রাহি.) বলেন:
مَا زَالَ المُسْلِمُونَ يُصَلُّونَ فِي جِرَاحَاتِهِمْ
অর্থাৎ,‘‘মুসলমানেরা সবদায় তাদের শরীর ক্ষত-বিক্ষত বা জখম থাকা অবস্থায় সালাত আদায় করতেন’’।৪
ইসলামী ফিকাহ গ্রন্থে রক্ত বের হলে তার বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে,
মানুষের শরীর থেকে যে রক্ত বের হয় তা দুই প্রকার:
১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দ্বারা নির্গত রক্ত। ইহা ওযু ভঙ্গকারী রক্ত।
২. শরীরের বাকি অন্য কোন স্থান দ্বারা নির্গত যেমন: নাক, দাঁত, খতস্থান ইত্যাদি হতে নির্গত রক্ত ওযু নষ্ট করবে না। রক্ত চাই কম হোক বা বেশী হোক। কিন্তু পরিস্কার-পরিচ্ছনার জন্য ধুয়ে নেওয়া উত্তম।৫
উৎসঃ
১. আল-উম্ম (১/১৮০), আল-মাজমু’ (২/৫৫), আল-ইসিত্মযকরে (২/২৬৯) আল-মাসবূত্ব (১/৭৪), আল-মুগনী (১/১৮৪)।
২. এর সনদ দুর্বল; ইমাম বুখারী (১/২৮০) মুয়ালস্নাক সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবূ দাউদ (১৯৫) আহমাদ (৩/৩৪৩), ইবনে হিববান (১০৯৬), হাকিম (১/১৫৬) দারাকুতনী (১/২২৩) এর সনদে আক্বিল বিন যাবের আসার কারণে যঈফ। আলবানী তার সহীহ আবূ দাউদ (১৯৩) গ্রন্থে সহীহ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
৩. আস-সায়লুল জারার (১/৯৯)।
৪. সহীহ বুখারী (১/২৮০) মুয়ালস্নাক সূত্রে। ইবনু আবী শায়বাহ এ হাদীসটি সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন। যেমনটি এসেছে-ফাতহুলবারী (১/২৮১)। (সহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ ওযূ আবূ মালিক কামাল বিন আস-সাইয়্যিদ সালিম)।
৫. ইসলামী ফিকাহ পৃ: ৮৭০।
No comments:
Post a Comment