Friday, May 25, 2018

(১০) প্রশ্নঃ আকীকার বিধান ও পদ্ধতি কি ?

(১০) প্রশ্নঃ আকীকার বিধান ও পদ্ধতি কি ?

(১০) উত্তরঃ আকীকার আভিধানিক অর্থ, আল্লাহর দরবারে নজরানা পেশ করা, শুকরিয়া আদায় করা, জানের সদকা দেয়া ও আল্লাহর নেয়ামতের মোকাবেলায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ইসলামি পরিভাষায় আকিকা হচ্ছে, নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবেহ করা। আলেমদের অনেকেই আকীকা করাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন।
ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম বিষয় হলো সন্তানের আকীকা করা। ছেলের পক্ষ থেকে ২টি ছাগল/বকরি/দুম্বা/মেষ এবং মেয়ের পক্ষ থেকে ১টি ছাগল/বকরি/দুম্বা/মেষ আল্লাহর নামে যবেহ করা। হাদীসে এসেছে, সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাঃ বলেছেন,
«كُلُّ غُلَامٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ السَّابِعِ وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ»
সকল নবজাতক তার আকীকার সাথে আবদ্ধ। জন্মের সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে জবেহ করা হবে। ঐ দিন তার নাম রাখা হবে। আর তার মাথার চুল কামানো হবে। [বুখারী, সুনান আবূ দাউদ: ২৮৩৮]
ছেলের জন্য দুটি আর মেয়ের জন্য একটি পশু যবেহ করতে হবে। নাসাঈ, মিশকাত হা/৪১৫২।
উম্মে কুরজ আল-কাবিয়া বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন, ছেলের পক্ষ থেকে দুটি আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি পশু, নর-মাদি যে কোন এক প্রকার হলেই চলে, এতে কোন সমস্যা নেই। আবু দাউদ, নাসায়ি
অবশ্য ছেলের জন্য একটি করার হাদীছও আছে। আবু দাঊদ, মিশকাত হা/৪১৫৫।
ইবনু আব্বাস রাঃ বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাঃ
عَقَّ عَنْ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ كَبْشًا كَبْشًا عَنِ الْحَسَنِ كَبْشاً وَعَنِ الْحُسَيْنِ كَبْشاً
হাসানের পক্ষ থেকে একটি ও হুসাইনের পক্ষ থেকে একটি মেষ আকীকা দেন।” তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৯৭;আবু-দাউদ /১০৭; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৫৭-৫৯। আলবানী, হীহু আবী দাউদ ৬/৩৪১; হাদীটি সহীহ।
আকীকা হিসাবে ভেড়া, দুম্বা বা ছাগল জবাই করার কথাই হাদীসে বলা হয়েছে। আনাস রাঃ নিজের সন্তানদের পক্ষ থেকে উট আকীকা প্রদান করতেন বলে বর্ণিত হয়েছে। (তাবারানী) আয়েশা রাঃ এর এক ভাতিজার জন্মের পর একজন তাঁকে উট আকীকা দিতে পরামর্শ দেন। তখন তিনি বলেন
مَعَاذَ الله، وَلَكِنْ مَا قَالَ رَسُوْلُ اللهِ: شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ
“নাঊযু বিল্লাহ! তা করব কেন! বরং রাসূলুল্লাহ সা. যা বলেছেন তা করব: দুটি সমান মেষ।” বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরাবা ৯/৩০৭।
আকীকার পশু জবাইয়ের সময় اللهم منك ولك، هذه عقيقة فلان، بسم الله، الله أكبر
(হে আল্লাহ, আপনার পক্ষ থেকে এবং আপনারই জন্য। অমুকের আকীকা। বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার) বলার কথা কোনো কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। আকীকার গোশত কুরবানীর গোশতের ন্যায় পরিবারের সদস্যগণ সহ ধনী দরিদ্য সকলেই খেতে পারেন। তবে বর্তমানে আকীকার অনুষ্ঠানের নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির যে পদ্ধতি আমরা শুরু করেছি তা সুন্নাতের খেলাফ। আমাদের উচিৎ সুন্নাতের যথাযর্থ অনুসরণ করা ও বিজাতীয় সংস্কৃতির বর্জন করা। হাদীসে ৭ম দিনে আকীকা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী যুগে অনেক ফকীহ ৭ দিনের পরেও আকীকা দেওয়া যাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন। তাদের দলিল হলো, বুরায়দা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, সপ্তম দিন, অথবা চতুর্দশ দিন অথবা একুশতম দিন আকিকা কর। তিরমিযী
তাই জন্মের সপ্তম দিন, সম্ভব না হলে ১৪তম দিন বা ২১তম দিন আকিকা করা সুন্নত। বিষয়টি নফল এবং এতে প্রশস্ততা রয়েছে। তবে সুন্নাতের হুবহু অনুকরণ অনুসরণ উত্তম।
আকীকার কিছু উপকারিতা :
ক. আক্বীকা একটি ইবাদত, এর দ্বারা বাচ্চা দুনিয়াতে আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করার সৌভাগ্য অর্জন করে।
খ. এর ফলে বাচ্চা বন্ধক মুক্ত হয় ও মাতা-পিতার জন্য সুপারিশ করার উপযুক্ত হয়।
গ. এটা জানের সদকা। এর মাধ্যমে বাচ্চা তার জানের সদকা পেশ করে, যেমন আল্লাহ তাআলা ইসমাইলের পক্ষে বকরি ফিদইয়া হিসেবে পেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আমি এক মহান যবেহের (একটি জান্নাতী দুম্বার) বিনিময়ে তাকে (ইসমাইলকে) মুক্ত করলাম। (সূরা সাফফাত ১০৭)

  উত্তর দিয়েছেনঃ  মুহাম্মাদ হামিদুল ইসলাম আজাদ
         মোবাইলঃ  ০১৭৪২৩৪৪১০৭

No comments:

Post a Comment